আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রচনা


মানুষ যে ভাষায় কথা বলতে সবচেয়ে বেশি পারদর্শী সে ভাষা মা-বাবা পিতা-মাতা আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ছোটবেলা থেকেই শিখেছি সেটি হলো আমাদের সাধারণ মাতৃভাষা। ১৯৫২ সালে বাংলা পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিয়ে ঢাকা আন্দোলনরত ছাত্রদের উপরে পুলিশের গুলিতে অনেক তরুণ ছাত্র শহীদ হন। বাংলা ভাষার জন্য তারা প্রাণ দিয়ে গেছে তারা শহীদের খাতায় নাম লিখেছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রচনা


পোষ্ট সূচিপত্রআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে আমাদের বিভিন্ন রচনা ও বক্তব্য নিয়ে আপনাদের মাঝে আজ আলোচনা করব। আজকের আর্টিকেলটা সে শুরুতেই শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ভূমিকা

একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে ছিল আমাদের কাছে একটি ঐতিহাসিক দিন। বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেকই শহীদ হয়েছে রক্তের বিনিময়ে এই ভাষা তারা অর্জন করেছে। আমাদের সেই ভাষাশহীদ সালাম বরকত রফিক জাব্বার শফীসহ নামে অজানা শহীদদেরকে আমরা আজীবন স্মরণ করব। একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সহ সব বাংলা ভাষা ব্যবহারকার জনগণের গৌরব উজ্জ্বল একটি দিন। ভাষা শহীদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার জন্য এই দিনটিকে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

তাৎপর্য

১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট অবিভক্ত ভারত বর্ষ বিভক্ত হয় পাকিস্তানি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তানি দুইটি অংশ ছিল। একটি হলো পূর্ব পাকিস্তান আরেকটি হলো পশ্চিম পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানিরা সব সময় তাইতো রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু।পূর্ব পাকিস্তানের ওপরে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছিল উর্দুভাষা। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানেরা কখনো এটা মানতে পারি না উর্দু ভাষা হবে রাষ্ট্রভাষা। 

১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তানি গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্না ঢাকায় একজনসভা ঘোষণা করেন যে উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। গভার্নের মোহাম্মদ আলী জিন্নার এই কথা শুনে বাংলার মানুষ সাথে সাথে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। বাংলার ছেলেরা সাথে সাথে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। বাংলা তরুণ সমাজ প্রতিবাদের ছাত্ররা ধর্মঘট পালন করেন।

 ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল দশটা সরকারি নিষেধ ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে যোগ দেয় বাংলার ছেলেরা ছাত্রসমাজ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ।পুলিশ নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর বন্দুক, বায়নেট,টিয়ারগ্যাস গ লাঠিচার্স নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে । পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জাব্বার নাম অজানা অনেক শহীদ।

জাতীয় জীবনে একুশের তাৎপর্য

একুশ দিয়েছে জাতিকে মুক্তির ইশারা। বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে একুশ। ঐক্য নিয়ে এনে দিয়েছে বাঙালির মধ্য। জাতীয় জীবনে ২১শে তাৎপর্যপূর্ণ চেতনার দিন।

ঘটনার সূত্রপাত

১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানি গণপরিষদের প্রস্তাব উপস্থাপন হলে গণপরিষদের বক্তিতা করতে হবে ইংরেজীও উর্দুতে। কিন্তু পূর্ব বাংলা কিছু লোক এর প্রতিবাদ জানাই।তারা জানিয়ে দেয় বাংলা ভাষায় বক্তিতা দিতে হবে। কোন উর্দু ভাষাতে বক্তিতা দেয়া যাবে না। বাংলাতেই বক্তিতা করতে দিতে হবে। পাকিস্তানি মোট জনসংখ্যা৬৩ ভাগের মাতৃভাষা বাংলা।

ছাত্র আন্দোলনের সূত্রপাত

১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্না ঢাকায় একজন সভায় ঘোষণা করেন যে উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।কিন্তু ছাত্ররা তার কথা শুনে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। বাংলা ভাষা হবে রাষ্ট্রের একমাত্র ভাষা। ছাত্ররা ১৯৪৮ সালে ১১ই মার্চ আন্দোলনে আরও জনজাগরণ দেখিয়ে দিল।

জাতীয় চেতনা

১৯৫৯ সালে গণঅভ্যুন্থানে চেতনায় একুশ থেকে। বাঙালি সংগ্রামের চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। মাতৃভাষা আদায়ের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়। ফলে বাঙালি জাতির মধ্যে জাতীয় পদে বিকাশ ঘটে। জাতীয় চেতনা বোধ ও বিশেষভাবে ঐকতান মধ্যে একুশে ফেব্রুয়ারি সংগ্রামের পথ সফল অর্জন করেছে।

ভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্ব

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর্বে ব্রিটিশ সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সাহিত্য সুশান্ত তথা স্বাধীনতা প্রস্তাব নিয়ে ভারতেচলে বসে ক্যাবিনেট মিশন। পাকিস্তানের জন্ম সম্ভাবনা প্রেক্ষপট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠালগ্নের অব্যবহিত পূর্বে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চেয়ারম্যান ডঃজিয়া উদ্দিন পাকিস্তান একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। পূর্ববঙ্গ হতে ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এর বিরোধিতা করেন। তিনি জানে রাষ্ট্র ভাষা হবে বাংলা। পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানে এভাবে রাষ্ট্রভাষা বিতর্ক সূচনা হয়।

বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা

গভরনেল মোহাম্মদ আলী জিন্না ঢাকা এক জনসভায় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন উর্দু। তিনি বলেন রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। কিন্তু বাংলার মানুষ এটা মেনে নিতে পারেনি। তারা তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু পরবর্তীকালে খাজা নাজিম উদ্দিন আবারো পুনরায় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উন্দুকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেন।

বাংলা ভাষা আন্দোলন

১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্না ঢাকায় একজন সভায় বলেন রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে । বাংলা তরুণ সমাজ ও ছাত্ররা কখনো এটা মেনে নিতে পারেনি এর প্রতি তীব্র প্রতিবাদ জানাই। মোহাম্মদ আলী জিন্নার কথা শোনার পরে ছাত্রদের মধ্যে ভাষা আন্দোলনের সূপাত ঘটে। ভাষা আন্দোলনের উপরে সরকারি যতই দমন-নীতি চলতে থাক ততই আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনে বাংলাদেশের প্রস্তুাবক করে ২৭ টি দেশ। ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদ আলোচিত হয় ২৭কি সমর্থ দেশ কে নিয়ে।অবশেষে ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের ৩০ তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

একুশে ফেব্রুয়ারি 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা' দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায় পৃথিবীর মানুষের কাছে। ১৯৯৯ সালে নভেম্বর মাসে ইউনেস্কোর ৩০ তম সম্মেলন অধিবেশন এ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তখন থেকে পৃথিবীর সব ভাষাভাষী মানুষ এই দিনটিকে পালন করে আসছে। যা বাঙালির কাছে গৌরবময় বিষয়।

একুশে ফেব্রুয়ারি

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের দাবিতে ছাত্র সমাজের মধ্যে ধর্মঘট শুরু হয়। সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে এই সভা সমিতির মিছিল নিষেধ করে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তার নিষেধ অমান্য করে। সরকারের অন্যায় অত্যাচার প্রতিবাদে ছাত্রের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে প্রতিবাদে মিছিল করতে শুরু করে। ছাত্রদের উপরে পুলিশের গুলি চালানো হয়। ছাত্রদের উপরের গুলিবর্ষ করাতেই রফিক জব্বার সালাম বরকত নাম অজানা অনেকই গুলিতে নিহত হন। আন্দোলনে ঢাকা-চট্টগ্রাম সহ সারা দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলার মানুষ রাজপথে নেমে আসেন।

একুশে ফেব্রুয়ারির ও বাংলা ভাষার ব্যবহার

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি। কিন্তু এখনো দেশের বিভিন্ন স্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহার ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়নি। যেদিন আমাদের জাতীয় জীবনে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহার সেদিন একুশের প্রতি সত্যিকারের মর্যাদা দেখানো হবে। এই দায়িত্ব সকল শিক্ষিত বাংলাভাষীরা

শহীদ দিবস
১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়ে গেছে রাজপথে তাদের প্রতি ভাবগম্ভীর পরিবেশে শহীদ দিবস উদযাপন করা হয়।

শহীদ মিনার
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের জন্য যারা প্রাণ দিয়ে গেছে তাদের স্মরণীয় করে রাখার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে তৈরি হয়েছিল জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক শহীদ মিনার। এখানে শহীদ হয়েছিলাম বরকত। এই শহীদ মিনার আজ আমাদের গর্ব আর অহংকারের প্রতীক।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

১৯৯৯ সালে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। সারা বিশ্বে একুশে ফেব্রুয়ারি দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের জন্য আনন্দর ও গৌরবের বিষয়।

শেষ কথা

বাংলাভাষা পৃথিবীর একমাত্র ভাষা যে ভাষা সম্মান রক্ষার্থে রক্তে ঝরাতে হয়েছিল দামাল ছেলেদের। আজ আমরা কথা বলি মন খুলে বাংলা ভাষায়। আজ আমরা বুক খুলে বলতে পারি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিতে ভাষা যতদিন থাকবে ততদিন পৃথিবীর মানচিত্র থাকবে। আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা আজকে আপনাদের জন্য ২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম।

একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে রচনা জানতে হলে আমাদের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আজকের আর্টিকেলকে আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন। যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তার নতুন নতুন তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url